প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ কেন প্রয়োজন?
আপনি যদি অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন, তাহলে একটা জিনিস খুব ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে—এখনকার কাস্টমার আগের মতো না। তারা অনেক সচেতন, অনেক স্মার্ট। তারা শুধু প্রোডাক্টের নাম শুনেই কিনে ফেলে না। তারা চায়, আগে সবকিছু বুঝে নিতে, দেখে নিতে। একটা প্রোডাক্টের ছবি 📸, ফিচার, দাম 💰, অফার 🎁, গ্যারান্টি 🛡️, রিভিউ ⭐—সবকিছু ভালোভাবে জেনে তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেয়।
এখন ধরুন, আপনি ফেসবুকে একটা প্রোডাক্টের পোস্ট দিলেন—দু’টা ছবি, তিন লাইনের ক্যাপশন, নিচে ফোন নাম্বার দিলেন। খুব বেশি হলে একটা ইনবক্স অপশন। এতে কেউ অর্ডার করলেও, বেশিরভাগ মানুষই শুধু দেখে চলে যায়। কারণ তারা সব তথ্য পায় না।
এখানেই আসে প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ নামের জিনিসটা। এটা এমন একটা ওয়েবপেজ, যেখানে আপনার একটা নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের সবকিছু সুন্দর করে সাজানো থাকে। গ্রাহক এই পেজে গিয়ে চোখের সামনে সব কিছু পেয়ে যায়—ছবি, দাম, অফার, রিভিউ, ভিডিও, ইউজার ফিডব্যাক, এমনকি অর্ডার করার বাটনও 🛒। এক কথায়, ল্যান্ডিং পেজ হচ্ছে আপনার পণ্যের ডেডিকেটেড শোরুম, শুধু অনলাইনে 🌐।
বাংলাদেশে এখন অনলাইন ব্যবসা হুহু করে বাড়ছে 🚀। প্রতিদিন নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসছে। কেউ হ্যান্ডমেড পণ্য বিক্রি করছে, কেউ কসমেটিকস, কেউ বা কাপড় 👚। কিন্তু তাদের অনেকেই শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। অথচ আপনি যদি একটু সময় নিয়ে একটি সুন্দর, কার্যকর ল্যান্ডিং পেজ বানিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনি অনেক এগিয়ে থাকবেন।
চলুন, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সহজ কথায় বুঝে নেই—প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ কী, কেন এটা দরকার, আর এটা থাকলে আপনার ব্যবসা কীভাবে বদলে যেতে পারে। ✨
প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ কি? 📄
প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবপেজ, যেখানে কেবল একটি পণ্যের বিস্তারিত তথ্য থাকে। পণ্যের নাম, ছবি, ভিডিও, ব্যবহার পদ্ধতি, দাম, অফার, মূল্যছাড়, রিভিউ, কাস্টমার ফিডব্যাক, এবং অর্ডার করার অপশন—সব এক জায়গায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয় 🎯।
এই পেজটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন একজন গ্রাহক ঢুকেই সহজে বুঝতে পারে—এই পণ্যটি কী, এটা কেন উপকারী, কেন এটি অন্যদের থেকে ভালো, এবং সে কীভাবে এটি কিনতে পারে।
বাংলাদেশে অনেক ব্যবসা এখন অনলাইন ভিত্তিক 📱। তবে অনেকে এখনও শুধু ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দিয়েই পণ্য বিক্রির চেষ্টা করে। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন কাস্টমার বিস্তারিত জানতে চায়। তখন তাকে ইনবক্স করতে হয়, বার বার প্রশ্ন করতে হয়, যা অনেকেরই বিরক্তির কারণ হয় 😓। কিন্তু যদি একটি ল্যান্ডিং পেজ থাকে, যেখানে সব তথ্য একসাথে দেওয়া থাকে, তাহলে কাস্টমার সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে ✅।
এই পেজ সাধারণত দেখতে আকর্ষণীয় হয়। পণ্যের রঙ, ডিজাইন, ছবির মান, ভিডিও প্রেজেন্টেশন সবকিছু এমনভাবে সাজানো হয় যেন এটি একজন গ্রাহকের চোখে আলাদা গুরুত্ব পায় 👀। শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বিক্রি বাড়ানোর জন্য ল্যান্ডিং পেজকে কৌশলগতভাবে ডিজাইন করা হয়।
প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ কেন প্রয়োজন? 🤔
আমাদের দেশে অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা পণ্য অনেক ভালো দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও বিক্রি বাড়ছে না। কারণ তারা কাস্টমারকে ঠিকভাবে বুঝাতে পারছেন না। শুধু ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে, অল্প তথ্য দিয়ে কাস্টমারের মন জয় করা যায় না 😐। একটা ল্যান্ডিং পেজ সেখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
১। বিশ্বাস তৈরি হয় 🔒

আপনার পণ্যের গুণগত মান যত ভালোই হোক না কেন, যদি ক্রেতার মনে বিশ্বাস না জন্মায়, তাহলে সে কখনোই অর্ডার করবে না। বাংলাদেশে এখন অনেকেই অনলাইন থেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, কেউ পণ্য পায় না, কেউ ভিন্ন পণ্য পায়, আবার কেউ সময়মতো ডেলিভারিই পায় না। তাই আজকাল কাস্টমারদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। এই ভয় দূর করতে আপনাকে এমনভাবে প্রোডাক্ট উপস্থাপন করতে হবে, যাতে তারা প্রথম দেখাতেই মনে করে—“এই ব্র্যান্ড তো পেশাদার, বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে”।
এখানেই একটি ল্যান্ডিং পেজ বড় ভূমিকা রাখে। ধরুন, আপনি একটি হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন। আপনি যদি শুধু লিখেন “অরিজিনাল প্রোডাক্ট, অর্ডার করুন”—তাহলে খুব বেশি মানুষ আগ্রহী হবে না। কিন্তু আপনি যদি ল্যান্ডিং পেজে সেই প্রোডাক্টের ডিটেইল ছবি দেন, উপাদানের ব্যাখ্যা দেন, ব্যবহার পদ্ধতি লেখেন, আগের ৫-৬ জন কাস্টমারের রিভিউ ও ছবি দেন, তাহলে একজন কাস্টমার বুঝবে—এই ব্র্যান্ডটি বিশ্বাসযোগ্য।
বিশ্বাস জন্মানোর পরই অর্ডার আসে। এই বিশ্বাস শুধু সুন্দর ডিজাইন দিয়ে হয় না, তথ্য এবং অভিজ্ঞতা দিয়েই তৈরি হয়। একটি ভালো ল্যান্ডিং পেজ এই কাজটাই করে—একজন আগ্রহী দর্শককে রূপান্তরিত করে একজন সিদ্ধান্ত নেওয়া কাস্টমারে।
২। মার্কেটিং খরচ কমে যায় 📉

অনেকেই ভাবেন, পেইড মার্কেটিং করলেই বিক্রি হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনি যত খরচই করুন, যদি সেই ট্রাফিককে আপনি ঠিক জায়গায় না পাঠান, তাহলে টাকা শুধু নষ্ট হবে। ধরুন, আপনি ফেসবুকে অ্যাড দিলেন কিন্তু কাস্টমার সরাসরি ইনবক্সে না এসে পোস্টে দেখে চলে গেল—তাহলে আপনি কিছুই পেলেন না।
একটা প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ এখানে বাজে খরচ কমিয়ে দেয়। আপনি যদি অ্যাডের টার্গেট হিসেবে আপনার ল্যান্ডিং পেজ ব্যবহার করেন, তাহলে একজন ভিজিটর আপনার পণ্যের ছবি, রিভিউ, ভিডিও, অফার সব এক জায়গায় দেখে নিতে পারে এবং যদি আগ্রহ হয় তাহলে সোজাসুজি অর্ডার করতে পারে। এতে করে ইনবক্সে আসার ঝামেলা, রিপ্লাই দেওয়ার বিলম্ব—এসব বাদ যায় এবং আপনি নিশ্চিত হন যে আপনার টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগছে।
পাশাপাশি, আপনি গুগল অ্যানালিটিক্স বা ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করে বুঝে নিতে পারেন—কোন বয়স, কোন এলাকা বা কোন ডিভাইসের মানুষ বেশি আগ্রহী। এতে করে পরবর্তী ক্যাম্পেইনে আপনি আরও নির্ভুলভাবে বাজেট ঠিক করতে পারবেন। অর্থাৎ, একটা ল্যান্ডিং পেজ আপনার মার্কেটিং কৌশলকে আরও কার্যকর করে তোলে।
৩। বিক্রি দ্রুত বাড়ে ⏩💵

কাস্টমারকে যদি আপনি “একটা বাটন” এ অর্ডার করার সুবিধা দেন, তাহলে সে অপেক্ষা করবে না। আমাদের দেশে এখন সময়ই সবকিছু। মানুষ চায় কম সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে, বেশি ভাবতে চায় না।
ধরুন, আপনি একটি বাচ্চাদের খেলনার ব্যবসা করেন। আপনি যদি শুধু ফেসবুকে লিখেন “অর্ডার করতে ইনবক্স করুন”—তাহলে ১০ জনের মধ্যে ২ জন ইনবক্স করতে পারে, বাকি ৮ জন চলে যাবে। কিন্তু আপনি যদি একটি ল্যান্ডিং পেজে সে খেলনার ছবি, বয়স উপযোগীতা, দাম, ভিডিও ডেমো ও “Buy Now” বাটন দেন, তাহলে কাস্টমার নিজের থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
তাছাড়া আপনি যদি “শুধু আজকের জন্য অফার”, “মজুদ সীমিত”, “৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্ডার করলেই ফ্রি ডেলিভারি”—এই ধরনের ট্যাকটিক যুক্ত করেন, তাহলে ক্রেতার ভেতরে একটা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ তৈরি হয়। এই চাপ থেকেই আসে “ইম্পালসিভ বাই”—মানে চিন্তা না করেই অর্ডার করে ফেলা। ল্যান্ডিং পেজ এমনভাবে ডিজাইন করলে আপনি একদিনে দ্বিগুণ অর্ডার পেতে পারেন।
৪। ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয় 🌟

অনলাইন পণ্য বিক্রি মানেই শুধু একটা প্রোডাক্ট পোস্ট দিয়ে বেচা নয়—এটা একটা ব্র্যান্ড গঠনের অংশ। আপনি হয়তো নিজেই কাস্টম প্রোডাক্ট তৈরি করছেন, বা বাইরের দেশ থেকে এনে বিক্রি করছেন। আপনার প্রোডাক্ট যদি ভালো হয়, তাহলে সেটাকে একটা পরিচিত ব্র্যান্ডে পরিণত করাই আপনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
এখন আপনি যদি শুধু ফেসবুকে কাজ করেন, তাহলে একজন মানুষ আপনাকে কেবল একজন ফেসবুক বিক্রেতা হিসেবে দেখে। কিন্তু আপনি যদি আপনার প্রতিটি পণ্যের জন্য পেশাদার মানের ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করেন, যেখানে আপনার লোগো, কালার থিম, ব্র্যান্ড স্টোরি, কাস্টমার সার্ভিস নম্বর থাকে, তাহলে মানুষ আপনাকে একটা “রিয়েল ব্র্যান্ড” হিসেবে ভাববে।
এই ভাবনাটা অনেক শক্তিশালী। আপনি ভবিষ্যতে যদি নতুন প্রোডাক্টও লঞ্চ করেন, মানুষ আগেই আপনার ওপর ভরসা করবে। এটা হয় না একদিনে, কিন্তু ল্যান্ডিং পেজের মাধ্যমে আপনি প্রতিদিন একধাপ করে সেই পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
৫। পণ্যের সঠিক উপস্থাপন 🎨

অনলাইনে পণ্যের ছবি দিয়েই সব বোঝানো সম্ভব না। আপনি যদি শুধু লেখেন “হাই কোয়ালিটি”, “অরিজিনাল প্রোডাক্ট”—এই শব্দগুলো এখন সবার পোস্টেই থাকে। কিন্তু মানুষ এখন তথ্য চায়।
ল্যান্ডিং পেজে আপনি বলতে পারেন—এই পণ্যে কী উপাদান ব্যবহার হয়েছে, কোন দেশ থেকে এসেছে, কাদের জন্য উপযুক্ত, এর সাইজ বা ভ্যারিয়েশন কী কী আছে, ব্যবহার করলে কী উপকার পাবেন, কারা এটি ব্যবহার করে ইতিমধ্যে উপকৃত হয়েছে।
যেমন ধরুন, আপনি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন। আপনি যদি শুধু “ফর্সা হোন” লিখে ছবি দেন, তাহলে সেটা আরেকটা সাধারণ পোস্টের মতোই মনে হবে। কিন্তু আপনি যদি ল্যান্ডিং পেজে গিয়ে সেই প্রোডাক্টের উপাদান, কিভাবে স্কিনে কাজ করে, কোন স্কিন টাইপের জন্য উপযুক্ত—এসব দেন, তাহলে কাস্টমার বুঝবে—এটা ভেবেচিন্তে তৈরি কনটেন্ট। সে তখন পণ্যের দিকে আগ্রহী হবে।
৬। কাস্টমার রিভিউ দেখানো যায় 💬

বাংলাদেশে অনলাইন শপিং করলে অধিকাংশ সময় কাস্টমাররা প্রথমেই খোঁজে রিভিউ বা অভিজ্ঞতা। কারণ তারা জানে, ছবি বা লেখায় অনেক কিছু বলা যায়, কিন্তু বাস্তব ব্যবহারকারীর মতামত সত্যিই মূল্যবান। যদি আপনার ল্যান্ডিং পেজে আগের ক্রেতাদের রিভিউ, তাদের ছবি বা ভিডিও ফিডব্যাক থাকে, তাহলে নতুন ক্রেতারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস পায়।
ধরুন, আপনি একটা ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন। কেউ যদি দেখতে পায় যে শত শত মানুষ ইতিমধ্যে সেটি কিনে সন্তুষ্ট, এবং তাদের ভালো রিভিউ পায়, তাহলে সে বিশ্বাস করে যে আপনার পণ্য আসলেই ভালো। আবার, যদি কেউ প্রশ্ন করে, আপনি সেই রিভিউগুলোর মাধ্যমে তার সন্দেহ দূর করতে পারেন।
রিভিউ গুলো যদি ভিডিও ফরম্যাটে হয়, যেখানে ব্যবহারকারীরা সরাসরি বলছে “আমি এই প্রোডাক্ট ব্যবহার করেছি, খুব ভালো কাজ করেছে”—তাহলে সেটি অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়। এতে কাস্টমারের মধ্যে যে বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা তৈরি হয়, সেটি বিক্রির জন্য এক বিশাল প্লাস পয়েন্ট।
৭। মেজারমেন্ট ও অ্যানালিটিকস 📊

আপনার ব্যবসা যতই ছোট হোক, যদি আপনি তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চান, তাহলে অ্যানালিটিকস ব্যবহার করা অপরিহার্য। প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজে এই সুবিধা খুব সহজে পাওয়া যায়।
আপনি জানতে পারবেন—কতজন মানুষ আপনার পেজে আসছে, তারা কতক্ষণ থাকে, কোন বাটনে বেশি ক্লিক করছে, কোথায় তারা ছাড়ছে। এই তথ্য দেখে বুঝতে পারবেন কোন জায়গায় আপনার পেজ ভালো কাজ করছে আর কোন জায়গায় উন্নতির দরকার।
বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে অনলাইন মার্কেট প্রতিদিনই বড় হচ্ছে, সেখানে এসব ডেটা বিশ্লেষণ করে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরি করা অনেক জরুরি। এর ফলে আপনার বিজ্ঞাপনে টাকা অপচয় কমে, এবং অর্ডারের পরিমাণ বাড়ে।
এছাড়াও, আপনি জানতে পারবেন আপনার গ্রাহকের বয়স, এলাকা, ব্যবহার করা ডিভাইস (মোবাইল, কম্পিউটার) ইত্যাদি। এই সব তথ্য দিয়ে আপনি পরবর্তী মার্কেটিং ক্যাম্পেইনগুলো আরও টার্গেটেড করতে পারবেন, ফলে লাভের সুযোগ আরও বাড়বে।
৮। বিভিন্ন অফার বা ক্যাম্পেইনের জন্য আলাদা পেজ 🎉
বাংলাদেশে বিশেষ উৎসব, ঈদ, পূজা, বা সিজনাল অফারগুলো ব্যবসার বড় সময়। এই সময়গুলোতে কাস্টমাররা বিশেষ ডিসকাউন্ট, প্যাকেজ ডিল, বা সীমিত সময়ের অফার খুঁজে বের করে।
আপনি যদি শুধু ফেসবুক পোস্ট বা ওয়েবসাইটে সাধারণ পেজ ব্যবহার করেন, তাহলে অফারগুলো খুব দ্রুত চোখে পড়ে না। কিন্তু আপনি যদি একটি বিশেষ ল্যান্ডিং পেজ বানান যেখানে শুধু সেই অফারের তথ্য থাকে, যেমন “ঈদ স্পেশাল ডিল”, “বছরের সেরা ডিসকাউন্ট”, “শুধু এই সপ্তাহে সীমিত মজুদ” — তাহলে কাস্টমারের মনোযোগ সেখানেই যাবে।
এভাবে আলাদা ক্যাম্পেইনের জন্য আলাদা পেজ থাকলে, আপনি আপনার মার্কেটিং কৌশল আরো বেশি কার্যকর করতে পারেন। আপনার গ্রাহক বুঝতে পারবে, এটা স্পেশাল অফার, আর দ্রুত কিনতে হবে। এতে করে বিক্রিও অনেক বাড়ে।
৯। মোবাইল ও ডেস্কটপ ফ্রেন্ডলি 📱💻

বাংলাদেশে আজ প্রায় ৯০% মানুষ মোবাইল দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাই আপনার ল্যান্ডিং পেজ মোবাইল ফ্রেন্ডলি না হলে, অনেক গ্রাহক পেজ খুলেও নষ্ট মনে করবে বা অর্ডার করতে সমস্যা হবে।
একটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি পেজে সব ছবি ও লেখা স্বচ্ছন্দে দেখা যায়, লোডিং টাইম কম থাকে, বাটন গুলো ছোট কিংবা বড় না হয়ে ঠিক মতো থাকে। এতে কাস্টমারের ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা অনেক ভালো হয়।
যদি পেজ মোবাইলের জন্য খারাপ হয়, তাহলে অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা অর্ডার দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। তাই ভালো ডিজাইন ও মোবাইল অপটিমাইজেশন জরুরি।
ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের কথা চিন্তা করেও পেজ তৈরি করতে হবে, যাতে বড় স্ক্রীনে সবকিছু সুন্দরভাবে দেখা যায়।
১০। কাস্টমারকে সরাসরি অ্যাকশন নিতে সাহায্য করে 🛍️

অনেক সময়ই মানুষ দেখেই যায়, কিন্তু কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এর জন্য আপনার পেজে এমন কিছু বাটন থাকা প্রয়োজন যা সরাসরি ক্রেতাকে কিনতে সাহায্য করে। যেমন—“অর্ডার করুন”, “ফ্রি কনসাল্টেশন নিন”, “হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করুন”, “কল করুন” ইত্যাদি।
এই ধরনের Call To Action (CTA) বাটন যদি পেজের প্রত্যেক জায়গায় সঠিকভাবে থাকে, তাহলে গ্রাহক সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর বাংলাদেশে যেখানে মানুষের অনেকেই এখনও সরাসরি ফোন করে কেনাকাটা করতে চায়, সেখানে “কল করুন” বাটন একদম জরুরি।
এছাড়া অর্ডার ফরম সরল ও সহজ করতে হবে, যাতে মাত্র কয়েক ক্লিকে অর্ডার সম্পন্ন হয়। বেশি তথ্য চাইলে মানুষ বিরক্ত হয়। তাই সহজ, দ্রুত, এবং সুবিধাজনক অভিজ্ঞতা দিতে হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
“প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ কেন প্রয়োজন?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ কি শুধু বড় কোম্পানির জন্য?
না, ছোট উদ্যোক্তা, ফেসবুক ব্যবসায়ী, এমনকি একক পণ্য বিক্রেতারাও ল্যান্ডিং পেজ ব্যবহার করে সফল হতে পারেন।
প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করতে কি অনেক টাকা লাগে?
একদম না! আপনি চাইলে স্বল্প খরচে ফ্রিল্যান্সার বা ওয়েব ডিজাইনার দিয়ে বানাতে পারেন, এমনকি কিছু টুল দিয়ে নিজেও তৈরি করতে পারেন।
উপসংহার 🧾
বাংলাদেশে আজকে যারা অনলাইন ব্যবসা করছে, তাদের মধ্যে সফল হচ্ছেন তারাই, যারা নতুন প্রযুক্তি আর প্রেজেন্টেশন স্টাইল ব্যবহার করছেন। আপনি যদি নিজের ব্যবসাকে গুরুত্ব দেন, তাহলে প্রোডাক্ট ল্যান্ডিং পেজ আপনাকে সেই সুযোগ করে দিতে পারে।
এটা শুধু ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অংশ না, বরং এটা এখন অনলাইন ব্যবসার একটি “অস্ত্র” ⚔️। আপনার প্রতিযোগীরা যদি এই সুবিধা নিচ্ছে, তাহলে আপনি কেন নয়?
স্মার্ট ব্যবসায়ীরা সবসময় নতুন কৌশল খোঁজে। আপনি যদি সত্যিকারের উদ্যোক্তা হন, তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন আপনার প্রোডাক্টের জন্য একটি সুন্দর ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করা।